
বাজিতপুর প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে বাজার সংলগ্ন নিউ মার্কেটের বিপরীতে ডি.আর.কে টাওয়ার-এর মালিক হাজী মো. আমজাদ হোসেন (রাসেল) গং। ডি আর কে টাওয়ারে ১২ টি আবাসিক ফ্ল্যাট ও নীচতলায় ১৮টি দোকান নিয়ে রানিং মার্কেট রয়েছে। উক্ত টাওয়ারে যাতায়াতের রাস্তা পুরোটাই অবৈধভাবে বন্ধ করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা কাইয়ুম খান হেলাল।
ভুক্তভোগী হাজী মো. আমজাদ হোসেন (রাসেল) জানান, আমরা তিন ভাই ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর বাজিতপুর বাজারে ৭.৫ শতাংশ জমি ক্রয় করি। জমিটি রাস্তা থেকে একটু ভেতরের দিকে হওয়ায় চলাচলের রাস্তাসহ ক্রয় করি। জমির মালিক শফিকুল আলম রেজিষ্ট্রিকৃত দলিলে উল্লেখ করেন ৭ নং কলামে দক্ষিণ দিকে কলেজ রোডে যাওয়া আসার যে রাস্তাটি বিদ্যমান রহিয়াছে, তাহা সহ বিক্রিত বলিয়া গণ্য হইল’। তৎদখল আপনাদের বরারব বুঝাইয়া দিলাম।’ পরবর্তীতে ডি.আর.কে টাওয়ার নির্মাণের সময় আমরা উক্ত রাস্তাটি আমরা নিচ খরচে পাকা করি।
তিনি বলেন, ২৫ জানুয়ারি ২০১২ সালে কাইয়ুম খান হেলাল আমার ভবনের রাস্তার পাশে একটি ছোট লম্বা দোকানসহ কিছু জমি ক্রয় করেন। রেজিস্ট্রিকৃত দলিলে হেলাল খান ১১ ফুট ১ ইঞ্চি প্রস্ত ও ৪৬ ফুট দৈর্ঘ্য মোট ১ শতাংশ ১৮ পয়েন্ট জমির মালিক হন। উক্ত দলিলের ৭ নং কলামে উল্লেখিত রাস্তার বিষয়ে বলা হয়েছেÑ ‘উক্ত রাস্তাটি চিরকাল কায়েক ও বজায় থাকিবে। কোনো কালেও রাস্তাটি বন্ধ করা হইবে না’।
ভুক্তভোগী আমজাদ হোসেন (রাসেল) অভিযোগ করেন, সম্প্রতি হেলাল খান গং তাদের ক্রয়কৃত স্থানে পুরাতন দোকানঘর ভেঙে নতুন বিল্ডিং করতে গিয়ে আমাদের ক্রয়কৃত রাস্তা পুরোটাই দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশনায় দেখা গেছে, গত ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট এস এম মাজহারুল ইসলাম-এর আদেশেও স্পষ্ট উল্লেখ আছে ‘যেহেতু পক্ষগণের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা চলমান রয়েছে, সে প্রেক্ষিতে পক্ষদ্বয় সংশ্লিষ্ট আদালতে প্রতিকার পাবেন। সার্বিক অবস্থা বিবেচনাক্রমে উচ্চতর আদালত কর্তৃক ভিন্নরূপ কোনো আদেশ না আসা পর্যন্ত পক্ষগণকে স্ব-স্ব অবস্থানে থাকার জন্য বলা হলো।’ বর্তমানে এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের মামলা চলমান। মামলা নং-৬৬/২০২৫।
সরেজমিনের দেখা যায়, উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত ফয়সালার অপেক্ষা না করেই কাইয়ুম খাঁন হেলাল গং তাদের বিল্ডিং নির্মাণ কাজ চুপিসারে রাতের অন্ধকারে মধ্যরাত পর্যন্ত পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন। ডি.আর.কে টাওয়ারকে ঝুঁকির মুখে ফেলে পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই হেলাল খান তার বহুতল বিল্ডিং করছেন।
বাজিতপুর উপজেলার প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন/নিবেদন করেও হেলাল খান গংদের জবরদখল থামানো যাচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ।
স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী প্রশ্ন তুলেন, ‘কাইয়ুম খান হেলাল ৮ আট ফুটের একটি দোকানের মালিক হয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন কিভাবে? এটি একটি হাস্যকর বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘ডি আর কে টাওয়ারের যাওয়া-আসার জন্য একটি ৭ সাত ফুট প্রস্ত পাকা রাস্তা আছে। হেলাল খান অবৈধভাবে সে রাস্তাটি বন্ধ করে বিল্ডিং নির্মাণ করছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘৪র্থ তলা ডি আর কে টাওয়ারে ১২টি ফ্ল্যাট এবং টাওয়ারের নিচতলায় ১৮টি দোকান নিয়ে একটি রানিং শপিং মার্কেট রয়েছে। ডি আর কে টাওয়ারের মালিকদের নিজ নামে ক্রয়কৃত ৭ ফুটের রাস্তাটি এ টাওয়ারে বসবাসকারী এবং শপিং মার্কেটের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা। কাইয়ুম খাঁন হেলাল এ রাস্তাটি বন্ধ করে বিল্ডিং নির্মাণ করছে। দেশে কি আইন কানুন সমাজ বলে কিছু নাই।’
এ ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার রাতে কাইয়ুম খান হেলাল-এর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তাটি নিয়ে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের প্রতি সম্মান রেখেই নির্মাণ বন্ধ রেখেছি।
আপনার মতামত লিখুন :