বিজনেস ফাইল ডেস্ক
দ্রুততম সময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের নেতারা।
তাদের ভাষ্য, সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করা ঠিক হবে না, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সব সমস্যার সমাধান হবে।
শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তারা এই মত দেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।
নজরুল ইসলাম খান জানান, বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। নিজেদের ভেতরে এবং শরিকদের সঙ্গে আরও আলোচনার পর যৌথভাবে কিংবা যার যার অবস্থান থেকে চূড়ান্ত অবস্থান জানানো হবে।
‘ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেটা হবে যখন জনগণ অবাধে, নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিতে পারবে,’ বলেন নজরুল।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘১২ দলীয় জোট নেতা এবং বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক হয়েছে। আগামী দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচি কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। আজ আমরা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি।’
ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যে ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার প্রেস সচিব বলেছেন ৩০ জুন। আমরা চাই, সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। সংস্কারের নামে নির্বাচনে দেরি করা ঠিক হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর আন্দোলন করেছি এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। বাংলাদেশে সব সমস্যার সমাধান হবে যদি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেছি, কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আরও আলোচনা হবে।’
‘নির্বাচন যাতে শিগগির হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সেই দাবি জানাই,’ যোগ করেন ফরহাদ।
বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা প্রসঙ্গে জোট নেতাদের কাছে মতামত জানতে যায় বিএনপি। সেখানে এসব জোট ও দলের নেতারা অভিন্ন সুরে জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ২০২৫ সাল অতিক্রম করতে পারে না। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর ষড়যন্ত্র করতে সক্ষম হবে। এতে দেশ ও জাতির বড় ক্ষতি হবে।
আরও জানা যায়, বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও তার প্রেস সচিবের বক্তব্যে পরস্পরবিরোধী উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেন নেতারা। তারা বলেন, সরকারের মধ্যেই কোনো সমন্বয় নেই। এতে শুধু রাজনৈতিক অঙ্গণে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তাই সরকারের মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় থাকা উচিত এবং নির্বাচন ইস্যুকে তাদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
প্রথমে ১২ দলীয় জোট, এরপর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও সর্বশেষ লেবার পার্টির সঙ্গে মতবিনিময় হয়।
এতে ১২–দলীয় জোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিকল্পধারার নুরুল আমিন ব্যাপারী, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, লেবার পার্টির (একাংশ) মো. ফারুক রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম ও জাগপা রাশেদ প্রধান উপস্থিত ছিলেন। এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ১১টি দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি নেতারা বিএনপির লিয়োজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।