দেশপ্রেম ও সততা নিয়ে কাজ করলেই উন্নয়ন সম্ভব: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৮:৫৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২১

বিজনেস ফাইল ডেস্ক:
দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশের উন্নয়ন করতে হলে নিষ্ঠাবান হতে হবে। দেশপ্রেম থাকতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, সততা নিয়ে কাজ করলে একটি দেশের উন্নতি করা যেতে পারে।

বুধবার জাতীয় সংসদে টাঙ্গাইল-৭ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেনের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরাতো এমনও দেখেছি নিজের দেশের অর্থ অন্যের হাতে তুলে দিয়ে, সেই অর্থ আবার কমিশন হিসাবে খাওয়া। এর চেয়ে লজ্জার কথাতো আর কিছু থাকতে পারে না। আমাদের দেশের প্রতিটি পাই পাই টাকা, দেশের উন্নয়নে ব্যয় হবে। দেশের সব মানুষের উন্নতি মানেইতো নিজের উন্নতি। সেই ধরনের নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব যে আমাদের জন্য কত প্রয়োজন, সেটা আমরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি।

তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন করতে হলে নিষ্ঠাবান হতে হবে। দেশপ্রেম থাকতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, সততা নিয়ে কাজ করলে একটি দেশের উন্নতি করা যেতে পারে। তাছাড়া যে করা যায় না, সেটা আমরা পঁচাত্তরের পরে ২১টা বছর দেখেছি। আজকে বার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতি করেছে, সেটা কি সম্ভব হতো? যদি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমরা কাজ না করতাম। কখনোই হতো না।

একাব্বর হোসেনকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাব্বর হোসেন ছিলেন এমন একজন নিষ্ঠাবান, সৎ ও নিবেদিত প্রাণ। একাব্বর থাকলে এদেশের রাজনীতিতে অনেক অবদান রাখতে পারতো। কারণ তার সততা, একনিষ্ঠতা ও দেশপ্রেম, একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে যা সব থেকে বেশি প্রয়োজন, নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলী যেমন ছিলো।

তিনি বলেন, আমাদেরকে আবারো সেই শোকপ্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিদিনই তার চিকিৎসার খবর নিচ্ছিলাম। গতকাল খবর পেলাম তার আবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। লাইফসাপোর্টে নেয়া হয়েছে। তখনই আমার সন্দেহ হলো আর বোধহয় ফিরে আসবে না। সেই ঘটনাটাই ঘটলো।

আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার আমরা সংসদ সংসদ শুরু করলাম- তখন সত্যি একটি আশ্বস্ত নিয়েই ছিলাম। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা সংসদের ২০ জন সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি। বলতে গেলে প্রতিবারই সংসদ শুরু করতে হতো শোকপ্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু শোকপ্রস্তাব এবার নেয়া হলেও কোনো এমপির মৃত্যুর জন্য আলোচনা করার দরকার হয়নি বলে আশ্বস্ত ছিলাম। স্বস্তি নিয়ে শুরু করলাম ঠিকই, কিন্তু ভয়াবহ আঘাতটা এলো।

তিনি বলেন, একটি সংসদে এতজন মানুষের মৃত্যু। সত্যিই যেন অস্বাভাবিক ঘটনা আমাদের জীবনে ঘটে গেল। যারা দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে-তারাই যেন একে একে চলে যাচ্ছে। সে একাব্বর সবসময় সক্রিয় ছিলেন। তিনি আদর্শের প্রতীক ও নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ছিলেন ভালো সংগঠক। দেশ ও জনগণকে অনেক কিছু দিতে পারতো।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালের পর থেকে অনেক ঝড়ঝাপটার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হয়েছে। পদে পদে বাধা। যেখানে সভা করতে গিয়েছি বাধা। মিটিংয়ে বোমা হামলা থেকে শুরু করে মঞ্চ পোড়ানো। অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে চলতে হয়েছে। একাব্বরদের মত আমাদের নিবেদিত কর্মী যারা ছিলো তারা সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সমাবেশ যোগ দিয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম গড়েছে। গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিলো। কোন সমাবেশের ডাক দিলেই ছুটে আসতো। আন্দোলনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে একাগ্রচিত্র হয়ে কাজ করেছে। তার অবদানটি কখনো ভোলার নয়।

তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিলো। আত্মার সম্পর্ক ছিলো যার কারণে সহজভাবে নির্বাচনে জিতে আসতো। নির্বাচনে নমিনেশন পাওয়ার পর সে কারো থেকে চাঁদা তোলা, টাকা নেওয়া কোন কিছুই সে করেনি। মির্জাপুরের ওই এলাকায় আমাদের অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। সেখানে উন্নয়ন কাজে বাধা দেয়া বা কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে সে ছিলো না। বরং প্রতিটি কাজ যাতে সহজভাবে হয় সেই প্রচেষ্টা তার মধ্যে দেখেছি। টাঙ্গাইলের উন্নয়নে তার বিশেষ আগ্রহ ছিলো।

প্রতিটি স্থায়ী কমিটিতে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। সড়কের সভাপতি হিসেবে উন্নয়নের ভূমিকা রেখেছে।

দেশে খাদ্যের হাহাকার ছিলো না

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের দুর্যোগ বাংলাদেশ অনেক নিয়ন্ত্রণ করে জীবনযাত্রার যেন সচল থাকে। তার ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে। যেটা সবাই বলে। এখন অনেক উন্নত দেশেও খাদ্যের অভাব। দুর্ভিক্ষ অবস্থা। বাজারে জিনিসপত্র পাওয়া যায় না। সুপার মার্কেটগুলো খালি। আমি কিছুদিন আগে লন্ডনে ছিলাম। সেখানে শুনতে হয়েছে সুপার মার্কেটে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। জিনিস নাই, যোগান নাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছোট্ট একটি ভূখণ্ড। জনসংখ্যা অতিরিক্ত বেশি। তারপরেও গ্রাম পর্যন্ত খাদ্যের হাহাকারটা নাই। আমি যখন আহ্বান করলাম। সবাই নেমেছে। কাজ করেছে। আমার দলের লোকেরাও কাজ করেছে। তাছাড়া এই দেশের সব মানুষের ভিতরেই একটা আগ্রহ ছিলো। সবাই কাজ করেছিলাম বলেই দুর্যোগটা মোকাবেলা করতে পেরেছি।

ক্রসফায়ার বিএনপি শুরু করেছিলো

আওয়ামী লীগ সভাপতি ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। বলেন, অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা। তাছাড়া আজকে তাঁরা ক্রসফায়ার নিয়ে কথা বলে। এটাতো শুরুই করলো বিএনপি। র‌্যাব সৃষ্টি করে ক্রসফায়ার করে করে মানুষকে হত্যা করা।

১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি প্রথম আঘাত করে জাতীয় পার্টির ওপর। সেই সময় আওয়ামী লীগও রেহাই পায়নি। ওদের চরিত্রটা ছিলো ওইরকম। এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও আওয়ামী লীগের উপর অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। আমাকেতো কতবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চলতি সংসদের মারা গেলেন যারা

বক্তব্যের শুরুতে একাদশ জাতীয় সংসদের যেসব এমপি মারা গেছেন তার তালিকা তুলে ধরেন সংসদ নেতা। চলতি সংসদের যারা মারা গেছেন তারা হলেন- কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের এমপি রুশেমা বেগম (মহিলা আসন-৩৪), দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা এইচ এম এরশাদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনের মঈনউদ্দীন খান বাদল, গাইবান্ধা-৩ আসনের ইউনুস আলী সরকার, বাগেরহাট-৪ আসনের মোজাম্মেল হোসেন, বগুড়া-১ আসনের আবদুল মান্নান, যশোর-৬ আসনের ইসমাত আরা সাদেক, পাবনা-৪ আসনের শামসুর রহমান শরীফ, ঢাকা-৫ আসনের হাবিবুর রহমান মোল্লা, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের মোহাম্মদ নাসিম, ঢাকা-১৮ আসনের সাহারা খাতুন, নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম, সিলেট-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক, কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু, কুমিল্লা-৭ আসনের আলী আশরাফ, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের হাসিবুর রহমান স্বপন, জাপার সংরক্ষিত আসনের এমপি মাসুদা এম রশীদ ও টাঙ্গাইল-৭ আসনের একাব্বর হোসেন