ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী মহাসমাবেশ থেকে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে। এ দাবিগুলো মানা না হলে ঢাকা থেকে নোয়াখালী অভিমুখে লংমার্চ করা হবে।
শুক্রবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সমাবেশের সভাপতি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
অনিক রায় বলেন, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে আমাদের দাবি না মানলে আগামী ১৬ অক্টোবর ঢাকা থেকে নোয়াখালী লংমার্চ করা হবে।
৯ দফা দাবিগুলো হলো- অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে। পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরােধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডাে সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইন ও প্রথা বিলােপ করতে হবে।
এছাড়া সভা-সমাবেশে নারী বিরােধী বক্তব্য শাস্তিযােগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রেণে বিটিসিএল এর কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপােষকতা করতে হবে। তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইবুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সব মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে। ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫(৪) ধারাকে বিলােপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যেকোনাে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে। গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযােগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযােগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
এছাড়াও প্রতিদিন বিকেল ৪টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। ১১ অক্টোবর ধর্ষণ বিরোধী আলোচনা সভা ও চিত্রাংকন। ১২ অক্টোবর ধর্ষণ বিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৩ অক্টোবর চলচ্চিত্র উৎসব। ১৪ অক্টোবর নারী সমাবেশ এবং ১৫ অক্টোবর ধর্ষণ বিরোধী সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
সমাবেশে বাম ধারার ছাত্র ও যুব এবং নারী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন, বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক লিয়াকত আলি।
করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে সমাবেশে উপস্থিত না থাকলেও সংহতি জানান, ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম, অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, কাবেরী গায়েন, বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল ইসলাম, বামজোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ প্রমুখ।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মহাসমাবেশ শুরু হয়।
পাহাড় ও সমতলে অব্যাহত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়।