বেনাপোল প্রতিনিধি থেকে আইয়ুব হোসেন পক্ষী:
ঢাকার ডিএমপি পুলিশের হাতে আটক বেনাপোলের ছাত্রলীগ নেতা আকুল-আজিম সহ পাঁচজন আটকের অধিকাংশ পরিবার ফুটপাত থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
বিশেষ করে আটক হওয়া আজিমের বড় ভাই সামাদ আট বছর আগেও বেনাপোল দুর্গাপুর রোডের মাথায় ফুটপাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করতেন। (সবার কাছে পরিচিত ইয়ান ভাজা মুড়ি নামে) এরপর শুরু করেন ভ্যানে করে মালামাল বিক্রি। ভ্যানে করে সীমান্ত অঞ্চলে সে বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করে বেড়াতেন। ওই সময় আবার গ্যাস সিলিন্ডার ও তেল ভারতে পাচার করতেন। আর ভারত থেকে নিয়ে আসতেন বিভিন্ন ধরনের পণ্যের সাথে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যের চালান। একইসাথে রাতের আধারে বন্দরের তুলা চুরির সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।
এসব পণ্য রাতের আধারে তিনি পাচার করতেন ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এসব অনৈতিক ও অবৈধ ব্যবসা করে তিনি রাতারাতি হয়ে যান কোটিপতি। কালো টাকা সাদা তৈরি করার জন্য তিনি বেনাপোল বন্দরের দুই নম্বর গেটের সামনে একটা অফিস ভাড়া নেন। এরপর ২০০৯ সালে বিভিন্ন কায়দায় কাস্টম কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ তিনি সিএন্ডএফ এজেন্টের একটি লাইসেন্স তৈরি করেন।
এ ব্যবসার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে তিনি ভারত থেকে অস্ত্র ও মাদক দেশে প্রবেশ করান। ভারতের আমদানিকৃত মালামালের সাথে এসব অবৈধ অনৈতিক ব্যবসা করে তিনি রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। তিনি প্রতিবছর অন্তত ৫০ কোটি টাকার জমি ক্রয় করেন। সামাদের এ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হাওয়ায় এলাকার লোকজন সর্বত্রই কানাঘুষা করতে থাকেন।
গতকাল রাতে আজিম এন্টারপ্রাইজের আজিম ও বেনাপোলে ছাত্রলীগ নেতা আজিম সহ ৮ অস্ত্রসহ পাঁচজনকে আটক করেন ঢাকার ডিএমপি পুলিশ সদস্যরা। এরপর বেনাপোল জুড়ে এখন সর্বত্রে আজিম এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল সামাদ কে নিয়ে সমালোচনার ঝড়। অনেকের মুখে একই কথা ফুটপাতে ভাজা মুড়ির বিক্রয়কারী থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া সম্ভব একমাত্র এসব অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা করে।
আব্দুল সামাদের বাড়ির আশেপাশের লোকজন জানান, ৮ থেকে ১০ বছর আগে সামাদের বাবা ইয়ানূর বেনাপোল দুর্গাপুর রোডের মাথায় ফুটপাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করতেন। আব্দুল সামাদ ওই সময় বাবার সাথে ভাজা মুড়ি বিক্রি করতেন। তার কিছুদিন পরে সে নসিমনে করে সীমান্তের বিভিন্ন অঞ্চলে কেক ভাজা মুড়ি বিস্কিট সহ বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করতেন। ওই সময়ে তিনি আবার ভারতে গ্যাস সিলিন্ডার, সিগারেট, পাম তেল ও পেট্রোল পাচার করতেন। আর ভারত থেকে নিয়ে আসতেন বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় ঔষধ মাদকদ্রব্য সহ নানা পণ্য। কিন্তু গত কয়েক বছরে আগে বেনাপোল বন্দরের ২ নম্বর গেটের সামনে তিনি আজিম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি অফিস খোলেন। সে অফিসের ভিতর বসে তিনি কি কাজ করেন? না করেন? সেটা টেলিভিশনে আজিম ধরা পড়ার খবর জেনে এটা আর মানুষের কাছে শোনার প্রয়োজন নেই। আপনারা বিচার-বিশ্লেষণ করেন। তাহলে সব পেয়ে যাবেন বলে তিনি জানান।
বিষয়টি নিয়ে আজিম এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল সামাদের কাছে ফুটপাতে ভাজা মুড়ি ব্যবসা থেকে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বিপুল টাকার মালিক কিভাবে হলেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি কিভাবে টাকার মালিক হয়েছে সেটা অন্য কারো জানার কথা নয়। তাই আমার ব্যক্তিগত বিষয় আমি কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি নয়। কথা বলে তিনি তার ফোনের লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
যশোরে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা নাজমুস সাহদাতের কাছে অবৈধপথে অর্থোপার্জন কারীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা জানতে চাইলেন তিনি বলেন, কেউ যদি ভাজা মুড়ি বা চা বিক্রেতা অথবা সবজি বিক্রেতা থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করব। তাদের আয় উৎস গুলো আমরা খুঁজবো। এরপর তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।