বিজনেস ফাইল ডেস্ক:
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা। কিন্তু চালচলনে ছাপিয়ে গেছেন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাকেও। ওই কর্মকর্তার ক্ষমতার নির্দয় ব্যবহারে অতিষ্ঠ ইউনিয়নের সেবাপ্রার্থীরা। নারী লাঞ্ছনা, ঘুষ, অনিয়মসহ এহেন কোনো কা- নেই যা করছেন না। বিভিন্ন সময়ে অতিষ্ঠ ইউনিয়নবাসী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও সুফল মেলেনি। উল্টো অভিযোগে ক্ষিপ্ত নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নরাগাতী থানার পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী মাহমুদ মোল্লা দ্বিগুণ গতিতে চালাচ্ছেন অপকর্ম।
স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছর দেড়েক আগে নড়াইল জেলার নরাগাতি থানাধীন পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে মোহাম্মদ মাহমুদ মোল্লা যোগদান করেন। এরপর থেকেই ভূমি অফিসের প্রতিটি কাজে শুরু হয় ঘুষ বিনিময়। ডুমারিয়া গ্রামের বাসিন্দা
আবুল কালাম শিকদার বলেন, মোহাম্মদ মাহমুদ মোল্লা আমার ৩৯/১৪ ডেসিমেল জমির ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের জন্য আমার কাছ থেকে ৩ হাজার ৩৬ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য করেছেন। তিনি আমাকে ১ হাজার ১৬৪ টাকা সংবলিত কর প্রদানের রসিদ দিয়েছিলেন।
পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের মুলোস্রি গ্রামের কোমেলা বেগম অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পেতে নায়েব মাহমুদ তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তাকে ঘুষ দিতে বলেছিলেন। আমি তাকে ঘুষ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আমার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
একই ইউনিয়নের বাগুদাঙ্গা গ্রামের জামাল মোল্লার মেয়ে নীপা অভিযোগ করে বলেন, শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দিয়েছিল মাহমুদ মোল্লা। শারীরিক সম্পর্ক করলে আমার জমিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করবে।
একই ইউনিয়নের মুলোস্রি গ্রামের নুজহেম মোল্লার মেয়ে ডালিমও অভিযোগ করেন যে, নায়েব তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুললে তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়ার জন্য কয়েকবার প্ররোচিত করেছিল।
বাগুডাঙ্গা গ্রামের অধিবাসী মোস্তফা সিকদার বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ। জমির কর দেওয়ার জন্য মাহমুদ মোল্লার কাছে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার ও হয়রানি করেছেন। পরে ঘুষ দিলে কাজ করে দেন।
উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, যিনি স্থানীয়ভাবে পরিচিত নায়েব নামে। হয়রানি ও অপমানিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগণ গত ১৬ মার্চ অবিলম্বে অপসারণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়। এটি নড়াইল জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং কালিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া মোহাম্মদ গোলাম কবির বলেন, আমরা বিচার চাই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি আমাদের ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে মাহমুদ মোল্লার খপ্পর থেকে মুক্ত করার জন্য, যিনি ঘুষ ও অপমান ছাড়া আর কিছুই জানেন না। লিখিত অভিযোগের পরেই কালিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
কেবল নারী লাঞ্ছনা, হয়রানি আর ঘুষই নয়, নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত মাহমুদ মোল্লা। স্থানীয় কিছু অসাধু প্রভাবশালী মাহমুদ মোল্লার যোগসাজশে সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওই কর্মকর্তা টাকা দাবি করে এবং বিধবা নারীদের ঘর পাইয়ে দেওয়ার জন্য শারীরিক মেলামেশার প্রস্তাব দেওয়ার বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে।
চরসিংগাতী গ্রামের মুরসালিন বলেন, ৫০০ টাকা নিয়ে তাকে একটি ভুয়া দাখিলা দিয়েছেন। বল্লাহাটি গ্রামের মামুন মোল্যা বলেন, আমার দাখিলা কেটে দিয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকায় লেখা, কিন্তু নিয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী মাহমুদ মোল্লা বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। দালালচক্র আমার নামে অভিযোগ দিয়েছে। নারীদের বিষয়ে বলেন, অভিযোগ করলেই হয় না। তাদের কাছে কোনো অডিও বা ভিডিও থাকলে দেখাতে বলুন।
ঘুষ লেনদেনের অডিও এবং ভিডিওয়ের বিষয়ে বলেন, এগুলো সব এডিট করা। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা তদন্ত করে সত্যতা পায়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জহুরুল ইসলামকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত চলমান। আরও কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।