ঢাকা   ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসুন নতুন বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : শনিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৪
  • 117 শেয়ার

মোস্তাফিজুর রহমান
বাংলাদেশের জনগণকে তাদের দেশের ভালোমন্দ যাচাই-বাছাই করে ভালোকে ভালো বলতে হবে আর মন্দকে দূরে নিক্ষেপ করতে হবে। ৫৩ বছরের বাংলাদেশ দুনিয়ার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সব ব্যবস্থা আমাদের ধর্ম-বর্ণ, ছোট-বড় সবাইকে নিয়েই দেশে-বিদেশে প্রচার ও ভাবমর্যাদা বাড়াতে হবে।
দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, ধর্মীয় সহাবস্থান, ছোট-বড় ভেদাভেদ ভুলে আমরা বাংলাদেশি মনোভাব নিয়ে চলতে হবে। কেউ আমাদের বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বিরোধী কাজ করলে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে, কারো প্রতি ঘৃণা বা অসম্মানজনক কথা বা কাজ করা যাবে না। মহান আল্লাহ তার ইচ্ছায়ই এ ভূখণ্ডে আমাদের জন্ম দিয়েছেন। আমাদের কোনো হাত নেই জন্মের জায়গা চয়েস করার, তাই যে যেখানে জন্ম নিয়েছি, সেখানের ভাবমর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা আমাদর প্রত্যেক দেশপ্রেমিক নাগরিকের অন্যতম কাজ।
দেশের আইন বিভাগের স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে চলা এবং বিচারকার্য চাপমুক্ত অবস্থায় চলতে দেয়া, দেশের ভাবমর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার মধ্যে পড়ে। ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায়সঙ্গত অধিকার। এ অধিকার সংরক্ষণ করা দেশের সরকারের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোনো ভাবেই বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি করা বা হস্তক্ষেপ করা যাবে না। বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যেমন সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে, তেমনি বিচারকাজে জড়িত বিচারকদের নিরাপত্তার দায়িত্বও সরকারকে নিতে হবে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কার্যপরিচালনার স্বার্থেই বিচারকদের উচ্চ নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে।
দেশের পররাষ্ট্রনীতি স্বাধীন হতে হবে। সব দেশের সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি প্রভুত্ব বা বিরোধ নয়। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি কোনো দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। ছোট দেশ হিসেবে ব্যালান্স করে চলতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সবার স্বার্থেই শক্ত অর্থনীতির আওতায় চালাতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ব্যবহার্য পণ্য আমদানি-রফতানি ব্যালান্স অবস্থায় করতে হবে। সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বাণিজ্য ঘাটতির ব্যাপারে। দেশের অর্থনীতির প্রতি লক্ষ রেখে আমদানি-রফতানির নীতি মেনে চলতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলার সাথে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রাখতে হবে। চোরাচালানির প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। কোনোভাবেই সীমান্ত হত্যা না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
‘ফেলানী’, স্বর্ণা, জয়ন্তের মতো কিশোর-কিশোরী হত্যাকাণ্ড আমরা দেখতে চাই না। নিজেদের প্রয়োজনেই প্রত্যেক দেশ তাদের জনগণের ভালোর জন্য ন্যায়নীতি অনুসরণ করে সীমান্ত রক্ষা করা প্রত্যেক দেশের নিয়মনীতি মেনেই সীমান্তবিরোধমুক্ত রাখতে হবে। শান্তি চাই, অশান্তি দূর করতে চাই।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে এক নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে বিপ্লবে রূপ দিতে হবে। আর হানাহানি নয়। চেতনার কথা বলে আর দেশের বিভক্তি নয়। আমরা দেশের ১৮ কোটি মানুষ দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক হয়ে ৫৪ হাজার বর্গমাইলের দেশ বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী উন্নত দেশ গড়ে তুলতে চাই। সবাই একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চিন্তা-চেতনায় এক হয়ে দেশকে এগিয়ে নেব, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহও এ কাজে আমাদের সাহায্য করবেন সন্দেহ নেই।
এবার জাতিসংঘে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ভিত রচনা করে এসেছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে হাস্যোজ্জ্বলভাবে কোলাকুলি দুনিয়াব্যাপী প্রশংসার বন্যা বয়ে দিয়েছে। এছাড়া আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের নেতাদের সাথেও তিনি বৈঠক করেছেন, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ব্যাপারে মতবিনিময় করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাথে বৈঠক করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভূমিকা রাখার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশ থেকে পালানো হাসিনা অপমানের ওপর অপমান করে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছেন। মহান আল্লাহ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানিত করেছেন আর হাসিনাকে করেছেন বেইজ্জতি। আল্লাহ সবই জানেন ও বিচার করতে কোনো দ্বিধা করেন না।
নতুন সরকারের মেয়াদ বেশিদিন হয়নি। ইতোমধ্যে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হাজার হাজার নিরপরাধ মজলুম ব্যক্তিকে জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহত গতিতে বেড়ে চলছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের এয়ারপোর্টে ভিআইপি মর্যাদা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থনৈাতিক কর্মকাণ্ডের কাজ অনুকূল করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঋণখেলাপি দূর করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। বিদেশ থেকে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমরা সব ভালো কাজের বরকত কামনা করছি।
ইতোমধ্যে জানা গেল, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম ৪ অক্টোবর বাংলাদেশে আসছেন। প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ হবে। ভালো উদ্যোগ। কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে পরিণত হয়ে গত ৫ আগস্ট বিজয় লাভ করে।
আমরা যারা বেঁচে আছি, আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো শহীদের প্রেরণা আল্লাহর সাহায্যের কথা মনে করে দেশের পথে-প্রান্তরে আল্লাহর নিবেদিত কর্মী বাহিনীকে আল্লাহর দীন কায়েমে এগিয়ে আসা। বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তির উসিলা করা এবং দেশের ভাবমর্যাদা গোটা দুনিয়ার বুকে নতুন এক বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত করে তোলা । এদেশের মানুষ অনেক দলকে দেখেছে, আর কত একই বোতলে সাদা আর কালো পানির বদলা-বদলি। এবার দরকার সকল ইসলামি দলগুলি একতাবদ্ধ হয়ে আগামীর সরকার গঠনে এখন হতে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করা। সৎ নিয়তে যদি কাজ করলে আল্লাহ সাহায্য করবেন, ইনশাআল্লাহ। আসুন নতুন বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, হিউম্যান রাইটস ফোরাম।
০১৭৭০১৪৮৪৯৮

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০